নাদিয়া আমাদের সহযোদ্ধা। ছাত্রদলের মেয়ে নাদিয়া আমাদের উত্তরসূরী।
আমার চেনাপরিচিত অনেক অনুজ আছে নাদিয়ার বয়সী। হয়তো নাদিয়ার চেয়ে অনেকটা এগিয়ে তারা। তাদের কেউ কেউ হয়তো একদিন অনেক অনেক নাম করবে, পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। নাদিয়া নামের মেয়েটা তাদের কাছে বড্ড ম্লান।
নাদিয়া নিজের জন্য কিচ্ছু করতে চাননি। নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ সুখি সুখি ফ্যামিলি নিয়ে ভাবেনি। নাদিয়া সুন্দরী বটে। চাইলে বয়ফ্রেন্ড বগলদাবা করে চাঁটগার মেরিন ড্রাইভে চিল করতে পারতো। চাইলেই ফুলে ফুলে ঢুলে ঢুলে মার্কা জীবন বেছে নিয়ে ঢুলে পরতে পারতো।
নাদিয়া এসবের কিছুই করেনি। নাদিয়া নিজেরে নিয়ে ভাবেনি। নাদিয়া ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে গিয়েছিলো। গণগনে সূর্যের তাপে ঘামে ভিজে চুপচুপে স্লোগান নিয়ে তারুণ্যের সমাবেশে গিয়েছিলো। নাদিয়া তার বয়সী সকল তরুণ্যের জন্য অধিকারের বাংলাদেশ চেয়েছিল। টেকব্যাক বাংলাদেশ চেয়েছিলো। মানব ভার্সিস দানবের ফয়সালা রাজপথে করতে চেয়েছিল।
তাই সমাবেশ শেষে সন্ধায় বাড়ি ফেরার পথে মিরসরাইয়ের নাদিয়া ইছাখালী শাহাজী বাজার পার হচ্ছিল। তখনই নাদিয়ার দিয়ে এগিয়ে আসে ফ্যাসিবাদের আন্ডাবাচ্চাদের কালো থাবা।
কোম্পানির চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফার ছেলে পাবেল কামরুল গং এর তুলে নিয়ে যায় নাদিয়ারে।
গভীর রাত পর্যন্ত প্রথমে সিএনজিতে জোরজবরদস্তির পরে পরিত্যক্ত ঘরে আটকে রেখে পাষবিক মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাই আওয়ামী কোম্পানির এই বখাটে।
গণধর্ষণের চেষ্টা করে। বোকা মেয়েটা ভেবেছিল পুলিশ নিশ্চয় তারে উদ্ধার করবে। ফোন দিয়েছিল পুলিশকে। পুলিশ আসেনি। বাধ্য হয়ে শরীরের সব শক্তি দিয়ে চিৎকার শুরু করে নাদিয়া।
এরপর কি হয়েছিল জানেন?
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে এই লোমহর্ষক ঘটনার অভিযোগ জানায় নাদিয়া। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষ্ফোরক মামলার আসামী করা হয় নির্যাতিত নাদিয়ারে।
আচ্ছা এখনো কি মনে হচ্ছে বিএনপি নির্যাতকদের যে লিষ্ট তৈরি করছে তা অপ্রয়োজনীয়? হ্যা, আমরা লিষ্ট প্রস্তুত করছি। মানবের সাথে দানবের পার্থক্য নিরূপণে লিষ্ট হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত কাপুরষদের ভবিষ্যৎ বিচারের জন্য লিষ্ট হচ্ছে। ফ্যাসিবাদের ডান্ডা যারা চালাচ্ছে তাদের ঠান্ডা করতে এই লিষ্ট ব্যাবহার হবে৷ আইনের শাষণ প্রতিষ্ঠার পথে সুবিচারের জন্য লিষ্ট হবে।
কারো বোন নাদিয়া, কারো সহযোদ্ধা নাদিয়া, কারো প্রেমিকা নাদিয়া, কারো স্ত্রী নাদিয়া, কারো সন্তান নাদিয়া, কারো মা নাদিয়াদের জন্য যে কোম্পানি বাংলাদেশকে নরককুন্ড বানাচ্ছে তাদের চিরতরে উৎখাত করাতে আমাদের সংগ্রাম। তারুণ্যের সংগ্রাম। আমাদের সংগ্রাম চলবে
প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপে
হোক না আঁধার নিশ্চিদ্র
আমরা তো সময়ের সারথী
নিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র।
দিয়েছি তো শান্তি আরও দেবো স্বস্তি
দিয়েছি তো সম্ভ্রম আরো দেবো অস্থি
প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী রক্ত।
হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত
অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে
একদিন সে পাহাড় টলবেই
চলবেই চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই..
কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল
কোনদিন আমরা যে ভাঙবই
মুক্ত প্রাণের সাড়া আনবই।
আমাদের শপথের প্রদীপ্ত স্বাক্ষরে
নুতন সূর্যশিখা জ্বলবেই।
জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।
লিখা
লিখেছেন -ওয়াসিম ইফতেখার।