বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন ভিসানীতি সম্পর্কে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, এটা বেশ কঠোর একটা সিদ্ধান্ত, এবং এখানে একটা খুবই স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন এখন দেখবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেখানে কী ঘটে।
মি. কুগেলম্যান বলছেন, তার মনে হচ্ছে যে জো বাইডেন প্রশাসনের গণতন্ত্র প্রসারের এজেন্ডার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে নেয়া হচ্ছে। তিনি বিবিসি বাংলাকে এসব কথা বলেন। তার কথায়, ‘বাইডেন প্রশাসন একটা মূল্যবোধ-ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা জোরালোভাবে প্রয়োগ করছে।’
একই কথা বলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. আনু আনোয়ার।
‘বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছিল – কিন্তু তখন যুক্তরাষ্ট্র এরকম কোন ভূমিকাই নেয়নি। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি মূল্যবোধ-ভিত্তিক ছিল না। কিন্তু বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি মূল্যবোধ-ভিত্তিক এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে তারা অগ্রাধিকারের তালিকায় এক নম্বরে রেখেছে।’
ড. আনোয়ার বলছেন, নতুন ভিসা নীতিকে এ প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করাটাই সবচেয়ে সঠিক হবে।
তার কথা হচ্ছে, ‘বাইডেন সরকার যদি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন আছে বলে মনে করতো – তাহলে নিশ্চয়ই ডেমোক্রেসি সামিটে ঢাকা আমন্ত্রিত হতো।’
মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, ‘গত বেশ কিছুকাল ধরেই আমরা দেখছি বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের সরকারের ক্র্যাকডাউনের সমালোচনা করেছে, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’
‘এখন দেখা যাচ্ছে যে কূটনৈতিক পন্থার বাইরে গিয়ে তারা প্রয়োজনে ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ নিতেও ইচ্ছুক, এবং অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র ও অধিকার নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও প্রস্তুত,’ বলেন মাইকেল কুগেলম্যান।
মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “‘যুক্তরাষ্ট্র জানে যে বাংলাদেশে চীন অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতাও অনেক এবং যুক্তরাষ্ট্র সচেতন যে বাংলাদেশ – দক্ষিণ এশিয়ার আরো অনেক দেশের মতই – ভারত ও চীন উভয়ের সাথেই ভারসাম্য রেখে চলতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় এবং এটাও দেখতে চায় যেন তারা চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে।’
তার কথায় – ‘ওয়াশিংটনে আজকাল স্ট্র্যাটেজির কথা বললেই তা চীনের সাথে জটিলতার লেন্স দিয়ে দেখা হয়। আমার তো মনে হয় অনেকেই যুক্তি দেবেন যে এ ধরনের (ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের মতো) নীতি নিলে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, কারণ তা ঢাকাকে চীনের আরো ঘনিষ্ঠ হবার দিকে ঠেলে দিতে পারে, বা এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেইজিং ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে।’
‘সেটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অনুকূল হবে না। বরং বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসার ঘটানোর যে কথা আছে- তার আলোকে একে দেখাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়’ – বলেন মি. কুগেলম্যান।
অন্য আরেকটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করছেন মাইকেল কুগেলম্যান।
‘সম্ভবত বাংলাদেশকে ওয়াশিংটন এটা বোঝাতে চাইছে যে তারা কোন বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় – এমন ধারণা ঠিক নয়।
কারণ বাংলাদেশে এমন একটা ধারণা অনেকের আছে যে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের বিরোধী, যেহেতু তারা এ সরকারের অনেক সমালোচনা করেছে। কিন্তু এই নতুন ভিসা নীতিতে এটা পরিষ্কার যে এর আওতায় সরকার ও বিরোধীদল উভয়ের লোকেরাই পড়বেন – যদি তারা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন ।’
‘ফলে এটা হয়তো যুক্তরাষ্ট্র যে একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে এ ধারণা জোরদার করার জন্যই নেয়া হয়েছে’ বলেন তিনি।