দুর্গাপূজা নিয়ে ভারতের বিবৃতির একটি অংশকে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। সন্ধ্যায় জারি করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১২ই অক্টোবর ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের একটি বিবৃতি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাতে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সমস্ত সংখ্যালঘু এবং তাদের উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, বিশেষ করে দুর্গাপূজার গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের সময়। একই বিবৃতি ‘মন্দির ও দেবতাদের অপবিত্রতা এবং ক্ষতি একটি পদ্ধতিগত ধারা’ বলে অভিযোগ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং অযাচিত বলে মনে করে। পূজায় কেবলমাত্র ক’টি ঘটনার রিপোর্ট হয়েছে জানিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যার ভিত্তিতে সরকার হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উৎসবের সময় জুড়ে কোনোরকম বিলম্ব ছাড়াই ব্যবস্থা নিয়েছে। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাংলাদেশের উদারনীতি ও গণতন্ত্রের একটি কালজয়ী বৈশিষ্ট্য, যা মানুষ হিসেবে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে। গত ১০ই অক্টোবর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলার সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে একটি সোনার মুকুট চুরি হওয়ার বিষয়ে সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ওই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তার নিয়মিত পূজা অনুষ্ঠান দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত করেন। তখনো মন্দিরের ভেতরে মূল্যবান মুকুট অক্ষত ছিল। এটি অরক্ষিত এবং অনিরাপদ রেখে পুরোহিত এবং অন্য কর্মীরা কেন চলে গেলেন সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশে সকল নাগরিকের, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের একটি কর্তব্য। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রায় অভিন্ন ভাষায় দুর্গাপূজা এবং বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক মূল্যবোধকে পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী এবারেও দেশব্যাপী তাদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা আনন্দঘন পরিবেশে উদ্যাপন করেছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ জুড়ে ৩২ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়, যেখানে হিন্দু নারী, পুরুষ এবং শিশুরা দেবদেবীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। রোববার সন্ধ্যায় সারা বাংলাদেশে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে ১০দিনব্যাপী এই উৎসব। সব ধরনের উস্কানি ও অপপ্রচারকে উপেক্ষা করে সরকারের গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদ্যাপনের জন্য সরকার সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে অভিনন্দন জানান। গত সপ্তাহে সারা দেশে যে কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তার প্রেক্ষিতে সরকার অনতিবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসন এ পর্যন্ত ১১টি মামলা করেছে এবং এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭ জনকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটি চিরন্তন পরিচয় যা সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে। বাংলাদেশ সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই তার ধর্ম বা বিশ্বাস নির্বিশেষে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশে সকল নাগরিকের, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকার একান্ত কর্তব্যরূপে গণ্য করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে আশ্বস্ত করেছে যে, বাংলাদেশের জনগণের ধর্মনিরপেক্ষ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিচিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সরকার সদা সচেষ্ট।