আজ সোমবার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) নূরে আলম সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন—অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অভয়নগর সার্কেল) জাহিদুল ইসলাম ও কোর্ট ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন।
তবে, আজ সকাল থেকেই আফরোজার বাড়িতে তালা ঝুলছে। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা কোথায় গেছেন, প্রতিবেশীরা কেউ বলতে পারছেন না।
পুলিশের দাবি, শনিবার রাত ১২টার দিকে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জলিল মোল্যার স্ত্রী আফরোজাকে ৩০ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়।
আফরোজা বেগমের ছোট ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির মোল্যা দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, ‘গতকাল রাত ১২টার দিকে আম্মু বাড়ির পাশে টিউবওয়েলে পানি আনতে যায়। সেসময় বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ আসে। অভয়নগর থানার এএসআই সিলন আলী আম্মুকে বলে, তোর কাছে যা আছে বের করে দে। আম্মু তার কাছে কিছু নেই জানালে সিলন আলী একজন নারী পুলিশ দিয়ে তার দেহ তল্লাশি করেও কিছু পায়নি। পরে সিলন আলী আম্মুকে বেধড়ক মারধর করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমার সামনে আম্মুর চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।’
মৃত আফরোজা বেগমের বড় ছেলে ইজিবাইক চালক মুন্না মোল্যা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গ্রামের একটি মহলের ইন্ধনে অভয়নগর থানার এসআই সিলন ও শামছু গতরাত ১২টার দিকে আমাদের বাড়িতে আসে। পরে নিজেদের কাছে থাকা ইয়াবা দিয়ে মাকে আটক দেখায়।’
তিনি জানান, সিলনসহ কয়েকজন পুলিশ তার মাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারধর করে। পরে রাত ১টার দিকে থানায় নিয়ে যায়।
পরদিন সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আফরোজাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
ময়নাতদন্ত শেষে রোববার রাতেই স্বজনদের কাছে আফরোজার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। নিজ গ্রামে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দাফন সম্পন্ন হয় আফরোজার।
নিহতের স্বজনরা দাবি করেন, পুলিশের নির্যাতনে আফরোজার মৃত্যু হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব অভয়নগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় আফরোজার মৃত্যু হয়েছে। সেজন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সেটি এই কমিটি তদন্ত করে দেখবে। পুলিশের কোনো সদস্যের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই কমিটি কতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে সেটা জানাননি অতিরিক্ত এসপি জাহিদুল।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের ময়নাতদন্ত বোর্ডের কর্মকর্তা আরএমও ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষ। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য। ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য সংগৃহীত আলামত ল্যাব টেস্টে পাঠানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলে তা পুলিশ সুপারের কাছে জমা দেওয়া হবে।’