বাংলাদেশ—মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর রক্তাক্ত সহিংসতায় বাংলাদেশ আক্রান্ত হওয়ার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তার সশস্ত্র বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তুমুল গোলাগুলি—সংঘর্ষ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। দুপক্ষের ছোঁড়া গুলি, মর্টার শেল, বিস্ফোরিত রকেট লাঞ্চারের খোল এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে। এতে প্রতিদিনই বাংলাদেশের ভেতরে হতাহত, ঘরবাড়ি দগ্ধ হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে জীবনের নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত এলাকা ছাড়ছেন স্থানীয়রা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল—শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গতকাল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) শতাধিক সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে ভিড় জমাচ্ছে শত শত নাগরিক—যা যেকোন সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ এই অবস্থায় অনির্বাচিত আওয়ামী ডামি সরকারের অন্তঃসারশূন্য বক্তব্য এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানানো ও কার্যকর রাজনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবেলার পরিবর্তে শুধু ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের অবস্থান গ্রহণ নতজানু পররাষ্ট্র নীতির বহিঃপ্রকাশ বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটি। জনসমর্থনহীন সরকার সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশের সীমান্ত ও স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ না নিয়ে গতকাল ডামি সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অনির্বাচিত ও অপদার্থ বলেই সাহস করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। আজকে অন্য দেশের দ্বারা আমাদের স্বাধীনতা— সার্বভৌমত্ব যখন হুমকির সম্মুখীন, স্বাধীনতা যখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে, তখন শেখ হাসিনার ডামি সরকার কিছুই করতে পারছে না। তারা জনগণকে বন্দুকের মুখে জিম্মি করে অন্যের সেবাদাসত্ব করতে বাধ্য হচ্ছে বলেই এই অবস্থা।
‘কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সরকার ক্রমাগত কূটনৈতিক ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। মেরুদণ্ডহীন এই নতজানু সরকারের কারণেই জাতীয় সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে এবং জননিরাপত্তা অরক্ষিত। আওয়ামী ডামি সরকার কেবল দেশে বিরোধী মত দমন করতেই পারঙ্গম। অথচ সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন করে দেশের মানুষকে হত্যা করা হলেও ভীত—পরনির্ভরশীল সরকার বলছে ধৈর্য্য ধরতে হবে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের দায়িত্ব কি কেবল বাংলাদেশিদের লাশ গ্রহণ করা?
বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন সরকার সীমান্ত অরক্ষিত রেখে অতীতের ন্যায় অন্তঃসারশূন্য যে বক্তব্য দিচ্ছে তাতে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা—সার্বভৌমত্ব বড় ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সৃষ্ট সহিংস সংঘর্ষে ডামি সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষ হতাহতের ঘটনাসহ জাতীয় সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটি।’