সাভার (ঢাকা):
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় সাভারের যুবদল নেতা সুরুজ্জামান গুমের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের উত্তাপের মধ্যে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের একটি দল তাকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। গুমের শিকার হওয়ার ৬ দিন পর তাকে ফেরত দেওয়া হলেও, এই সময়ের মধ্যে তার পরিবার থেকে মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডিবি কর্মকর্তারা।যুবদল নেতা সুরুজ্জামান জানান, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট রাত ১০টার দিকে আদাবরের ভাড়া বাসা থেকে ৮-১০ জনের একটি ডিবি টিম তাকে তুলে নিয়ে যায়। গাড়িতে তোলার পরই তাকে কালো কাপড়ের মুখোশ পরিয়ে দেওয়া হয় এবং গাড়ির ভেতরেই শুরু হয় অত্যাচার ও অবান্তর প্রশ্ন।অমানবিক নির্যাতন ও গুমের পর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। সুরুজ্জামান বলেন, প্রথম তিন দিন তাকে রহস্যময় ‘আয়নাঘরে’ কাটাতে হয়েছে। সেখানে সব সময় চোখ ও হাত বেঁধে রাখা হতো।
তিনি সেই অন্ধকার ছোট কক্ষের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “চারদিকে কালো অন্ধকার, মনে হচ্ছিল যেন একটা কবর। শুধু ফ্যানের শব্দ শোনা যেত, দুনিয়ার কোনো খবর বোঝা যেত না, কারো সাথে কোনো যোগাযোগ করার ব্যবস্থা ছিল না।” সেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। খাবার হিসেবে শুধু পাউরুটি আর কলা দেওয়া হতো, এবং টয়লেটে যেতে হলে হাতে রশি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো। তিনি আরও অভিযোগ করেন, “তাদের মারপিট অত্যাচারে আমি কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক আমাকে দিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করে।মুক্তিপণ আদায় ও ভুক্তভোগী সুরুজ্জামানের অভিযোগ, গুমের পর ডিবি কর্মকর্তারা তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে কয়েক দফায় মোটা অংকের টাকা আদায় করে। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরই নাটকীয়ভাবে তাকে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়।গুমের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে একপর্যায়ে যুবদল নেতা সুরুজ্জামান কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তার সাথে হওয়া অমানবিক অন্যায়ের বিচার দাবি করে বলেন, “এরকম জঘন্য অপরাধ, মানবতা বিরোধী কাজ এই বাংলাদেশের মাটিতে যেন আর না হয়।” তিনি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন দুঃসাহস দেখাতে না পারে।