পাকিস্তানের আকাশসীমা সব ধরনের ফ্লাইট চলাচলের জন্য সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কিছুক্ষণ পরেই এই ঘোষণা এলো।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় এক বিদেশী নাগরিকসহ ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শুরু থেকেই পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে ভারত। তবে, হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ তদন্তে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছিল ইসলামাবাদ। তারপরেও পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। পাল্টা ব্যবস্থা নেয় পাকিস্তানও। এ নিয়ে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকি শেষ পর্যন্ত সংঘাতে রূপ নেয়। যা রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করতে চলেছিল।
ঘটনার শুরু থেকে ১৯ দিনের উত্তেজনা
ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগাম রিসোর্টে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হয়, যার ফলে আঞ্চলিক সংঘাত শুরু হয়। পরদিন ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করে, সীমান্ত বন্ধ করে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জল চুক্তি স্থগিত করে। এই হামলায় মদদ দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করে।
২৪ এপ্রিল ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে। পাকিস্তান ভারতের মালিকানাধীন বা ভারত-পরিচালিত সমস্ত বিমান সংস্থার জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। ২৫ এপ্রিল সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) দুই দেশের সেনাদের গুলি বিনিময় হয়, যা ২ মে পর্যন্ত চলে।
এরপর ৩ মে পাকিস্তান ৪৫০ কিলোমিটার (২৮০ মাইল) পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ভারত পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে তার বন্দরে প্রবেশ করতে নিষেধ করে এবং ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে পাকিস্তানি বন্দরে যেতে নিষেধ করে।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে ৭ মে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ভারত। এতে অনেকেই হতাহত হোন। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এমন অন্তত নয়টি স্থানে এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চালানো এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় অপারেশন সিন্দুর। যদিও পাকিস্তানের দাবি, তারা বেশ কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এই হামলাকে যুদ্ধের প্রথম ধাপ হিসেবে অভিহিত করে বিশেষজ্ঞরা।
৮ মে পাকিস্তান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপের দাবি করে ভারত। দিল্লি জানায়, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মাঝ আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ৯ মে ভারত এক সপ্তাহের জন্য তাদের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএল স্থগিত করেছে। জি-৭ দেশগুলো উভয় পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ থাকার আহ্বান জানায়।
১০ মে ভোরে পাকিস্তানের তিনটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এর জবাবে ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় পাকিস্তানও। এতে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের চরম উত্তেজনার মধ্যে শনিবার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্মতির কথা জানান।
ট্রাম্পের যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন্সের ফোন কথা হয়েছে। দুজনের মধ্যে স্থির হয়েছে ১০ মে বিকেল ৫টা থেকে দুই পক্ষই সব ধরণের গোলাগুলি চালানো এবং স্থল, আকাশ ও জলপথে সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসাক দারও জানিয়েছেন, পাকিস্তান ও ভারত তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। পাকিস্তান সবসময় তার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে আপস না করে এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ৪৮ ঘণ্টার জোরাল প্রচেষ্টায় ভারত-পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মার্কো রুবিও নিজেই এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমি এবং জেডি ভ্যান্স গত ৪৮ ঘণ্টা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসিম মুনীর, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ ঊর্ধ্বতন ভারতীয় ও পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
মার্কো রুবিও আরও জানান, দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে এবং একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করার বিষয়ে রাজি হয়েছে।