বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:০২ অপরাহ্ন
আপডেটঃ
জনাব তারেক রহমান কে নিয়ে নিয়ে কটুক্তি করলে বিন্দু পরিমানে ছাড় দেয়া হবে না-বিএনপি নেতা লায়ন খোরশেদ আলম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদের স্বরণে গাজীপুরে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালন করা হবে-কৃষকদল নেতা আতাউর রহমান ব্যবস্থা নেয়ার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দায় বিএনপির ওপর চাপানো অপরাজনীতি: সালাহউদ্দিন কঠোর হচ্ছে বিএনপি সাড়ে ৪ হাজার নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন কতটা প্রস্তুত কারা হেফাজতে নিহত নেতার মেয়ে পেলো জিপিএ-৫, তারেক রহমানের শুভেচ্ছা গাজীপুর: টঙ্গী প্রেস ক্লাবে আগামীকাল সাংবাদিকদের মৌসুমি ফল উৎসব ও মিলনমেলা সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আব্দুল জলিল গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম রনি’র জন্য দোয়া প্রার্থণা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদল: প্রাণ দিয়েছে ১৪৪ নেতাকর্মী

পাহাড় নিয়ে ব্যক্তিগত কিছু কথা-সায়েদ আব্দুল্লাহ্

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৮৮ Time View

পাহাড় নিয়ে নানা মানুষের নানা মত দেখলাম। আমি কোন সিকিউরিটি এক্সপার্ট না, জাস্ট নিজের একেবারেই ব্যক্তিগত কয়েকটা কথা বলছি।

১. খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি এলাকায় যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখা যাচ্ছে, এটার ফ্রুটফুল সমাধান হতে পারে উভয়পক্ষের শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে। আমি বিশ্বাস করি লোকাল হেডম্যান, কারবারি এবং আরও অনেকেই আছেন, তারা গ্রহণযোগ্য আলোচনায় সহযোগিতা করবে অনেকেই। উভয় পক্ষ থেকে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের বল প্রয়োগ কখনোই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে কাজ আগাবে না। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের উচিৎ হবে তাদের কাছে গিয়ে সংলাপের আয়োজন করা। আন্তরিক ডায়ালগ ছাড়া যাই করা হবে, সেটাই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাড়াতেই থাকবে।

২. পাহাড়ের অনেক দুর্গম এলাকার অনেক স্টুডেন্টকে নিয়ে বেশ কয়েকবছর কাজ করেছি আমি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে তারা সিরিয়াস বৈষম্যের শিকার হয়। ন্যূনতম নাগরিক ফ্যাসিলিটি তাদের নাই। তাদের জীবনমান নিয়ে ভাবার বহু সুযোগ আছে। পাহাড়ের সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে বিবেচনা করা উচিৎ। তাদের বহু জেনুইন অধিকার আছে, সেগুলোকে ইগনোর করার কোন সুযোগ নাই। তাদের সেসব অধিকারকে ইগনোর করাটাকে বড়সড় অন্যায্য কাজ মনে হয় আমার কাছে।

৩. পুরো পাহাড় একদম একইভাবে চিন্তা করে, এই ধারণাটা খুবই ভুল ধারণা। তাদের বিশাল বড় অংশ ইনফ্যাক্ট অধিকাংশ মানুষই খুবই শান্তিপ্রিয়। জীবন নিয়ে তাদের চাওয়া পাওয়ার সমীকরণগুলো খুবই সহজ সরল। তারা স্রেফ একটা অতি সাধারণ এবং প্রকৃতির সাথে মিশে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায়। তাদের অনেক মানুষের সংস্পর্শে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। তাদের আআন্তরিকতা এবং সরলতা আমাকে অত্যন্ত মুগ্ধ করেছে।

তবে, তাদের ভেতর কিছু অংশ আছে, যারা পলিটিক্যাল স্বার্থের জন্য খুব বাজেরকম কাজকর্মও করে। এই অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর সংখ্যা খুব বেশি না, তবে তারা অস্থিরতা তৈরী করে রাখে এবং সেটা করতে তারা যথেষ্ট ক্যাপাবল।

৪. একটা পপুলিস্ট কথা অনেকেই বলে, পাহাড়িরা সবাই নাকি স্বাধীন ভূখণ্ড জুম্মুল্যান্ড বানাতে চায়। কথাটা খুবই ভুল ধারণা। পাহাড়ের সিংহভাগ সাধারণ মানুষ স্রেফ তাদের কিছু শান্তিপূর্ণ অধিকার চায়।
আর এই সাধারণ এবং স্বাভাবিক দাবি-দাওয়াকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে অস্ত্রধারী কিছু পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের এজেন্ডার সাথে ওই সাধারণ পাহাড়িদের দাবিকে একইকাতারে রেখে দেখানোর চেষ্টা করে। তখন দেশের অন্যদের কাছে ভুল মেসেজ যায়, সবাই মনে করে পুরো পাহাড় জনপদের মানুষই বুঝি দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ইচ্ছা পোষণ করে।

ইনফ্যাক্ট, পাহাড়ি ট্রাইবাল গোষ্ঠীগুলোর ভেতরও কিন্তু সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের হেজিমনি কাজ করে, পলিটিক্যাল প্রভাব প্রতিপত্তির ক্ষেত্রে। দেখা যায় অনেক সম্প্রদায় আছে, যারা বৈষম্যের শিকার হয় ট্রাইবালদের ভেতর, যাদের ভয়েসকে অপ্রেসড করে রাখা হয় বা তারা সুযোগও পায়না তাদের কথাগুলো বলবার।

৫. অনেকেই আছেন পাহাড় সম্পর্কে বিস্তারিত আইডিয়া নাই, হয়ত দুই একটা ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরে এসেই তারা মনে করে পাহাড় এবং পাহাড়ি জনপদের সবকিছু বোঝা হয়ে গেছে তাদের। এইটাইপ কিছু মানুষ দেখি কিছু হলেই দাবি তোলে পাহাড় থেকে আর্মি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য, হ্যান ত্যান আর নানাকিছু।

কিন্তু পাহাড় যে কত জটিল জায়গা, এইটা সম্ভবত তারা অনুধাবনও করার চেষ্টা করেনা। আর জিওপলিটিক্যাল লোকেশন এবং জিওপলিটিক্স কীভাবে কাজ করে, সম্ভবত সেটা নিয়েও তারা ডিটেইলস ভাবার প্রয়োজন অনুভব করে না। পাহাড়ের বর্ডার কোন কোন দেশের সাথে এবং তারা কীভাবে ওঁৎ পেতে থাকে সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ হয়ে, এইগুলো সম্ভবত তাদের ধারণাও নাই। তারা মনে করে পাহাড়ে বোধহয় আর্মি, বিজিবি থাকে পাহাড়ের মানুষের ওপর টর্চার চালানোর জন্য। তারা হয়ত জানেনা, এই জায়গাগুলোতে প্রটেকশন না থাকলে পুরো চট্টগ্রামের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই যারা জিওপলিটিক্স না বুঝেই চট করে এত বড় বড় তত্ত্ব আওরে দেয়, তাদের উচিৎ দেশের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারটা নিয়ে ভালোমতো জানাশোনার চেষ্টা করা।

৬. দেশের পলিটিক্যাল বাস্তবতায় পাহাড়ে অশান্তি তৈরীর জন্য নানা জায়গা থেকে চেষ্টা হতে পারে বা হয়ত হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে আশু সতর্কতা প্রয়োজন। লোকাল কমিউনিটিগুলোর সাথে ইফেক্টিভ ডায়ালগ অত্যন্ত জরুরি। পাহাড়ের সাধারণ মানুষের নানা ধরনের বঞ্চনার কথা আছে, ন্যূনতম মানবিক জীবনযাপনের জন্য তাদের যেসব অধিকার দরকার, সেগুলো আন্তরিকভাবে বিবেচনা করা দরকার। একইসাথে ওইখানে অস্ত্রধারী বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী যাতে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ কোন কাজ না তৈরী করতে পারে, সেদিকেও সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখার দরকার আছে। আবার একইসাথে ওই বিচ্ছিন্নবাদী কিছু মতের লোকদের জন্য যাতে পাহাড়ি জনপদের সাধারণ মানুষের ওপর কোনটাইপ কোন অশান্তি তৈরী না হয়, সেটাও অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। পাহাড়ি জনপদের এই ট্রাইবাল মানুষদের জন্য স্পেশাল কিছু প্রটেকশন যে রক্ষা করাটা জরুরি, সেটাও যাতে বিবেচনা করা হয়।

৭. মোদ্দাকথা হলো, পাহাড়ে বাস করা বাঙালি ও ট্রাইবাল গোষ্ঠী এবং পুরো দেশে বাস করা সবাই— আমরা সবাই একই বাংলাদেশের নাগরিক। জাতিগতভাবে ভিন্নতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক, সেই ভিন্নতার প্রতি রেসপেক্ট করাটা সবার দায়িত্ব। কিন্তু ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়টা আমাদের সবার। বিভিন্ন ভালনারেবল গোষ্ঠীর জন্য স্পেশাল প্রটেকশনের দরকার আছে, এটা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দরকার। আর জাতিগত ভিন্নতা সহই আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের বন্ধু, কেউ কারও শত্রু না, সবাই আমরা বাংলাদেশকে ঔন করি, এই বিশ্বাসটা সবপক্ষের মনের ভেতর ধারণ করানোর জন্য পারসন টু পারসন কমিউনিকেশন বাড়ানো উচিৎ। পারস্পরিক জানাশোনা কম থাকলে তখনই বিভক্তি দান বাঁধতে থাকে।

সায়েদ আব্দুল্লাহ্

শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী ও লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
©ziacyberforce.com
themesba-lates1749691102