বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

সমন্বয়ক সেজে কক্সবাজার সৈকতে তরুণী পেটানোয় সংঘবদ্ধ চক্র

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ Time View

ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্র কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নিয়মিতই হেনস্তা করতো তরুণী পর্যটকদের। কখনও তারা তাদের আচমকা এসে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতো, কখনও আবার প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবসও করাতো।

সমন্বয়ক সেজে কক্সবাজার সৈকতে তরুণী পেটানোয় সংঘবদ্ধ চক্র 1

গত ১১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সৈকতে দুই নারীকে হেনস্তার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া কথিত ‘সমন্বয়ক’ ফারুকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক দিনের রিমান্ডে আনার পর পুলিশকে এসব তথ্য দিয়েছেন তিনি। সংঘবদ্ধ চক্রের বেশ কয়েকজনের নামও জানিয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকে দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটলেও ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় সংঘবদ্ধ এই চক্রের সদস্যদের কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পেতেন না।

হেনস্তার শিকার হওয়া দুই নারীর একজন ১৪ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম ও নয়ন রুদ্র নামের দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সৈকতে যা ঘটেছিল

গত ১১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নারীদের হেনস্থা করার এমন তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ভাইরাল এক ভিডিওতে দেখা যায়, একদল উৎসাহী জনতা এক নারীকে কান ধরিয়ে ওঠ-বসা করাচ্ছে। আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাঠের তক্তা হাতে ফারুকুল ইসলাম।

ওই ভিডিওর শুরুতে দেখা যায়, ফারুকুল ওই নারীর মুখের সামনে কাঠের তক্তা তুলে নানা ধরনের প্রশ্ন করছেন, তার বাড়ি কোথায়, বাড়ির নম্বর আছে কিনা। এ সময় তিনি ধমকের স্বরে বার বার মেয়েটিকে তার মাস্ক খুলতে বলেন, “চিনস নাই আমারে? খুল এইটা!” পরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক নারী মেয়েটির মুখ থেকে জোর করে মাস্ক টেনে খুলে ফেলেন। এক পর্যায়ে লাঠির আঘাত থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগী ওই নারী কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য হন। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা অনেকেই সৈকতের পাশে হয়রানির এই দৃশ্য মোবাইলে ধারন করছিলেন। শুধু তাই নয়, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো তার কান ধরে ওঠ-বস গণনাও করছিলেন।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, এক দল যুবক সৈকতে পেতে রাখা বিচ চেয়ারে বসা এক নারীকে হয়রানি করছে। সেখানেও কাঠের তক্তা হাতে ফারুকুলকে দেখা যায়। তারা অতর্কিতভাবে ওই নারীকে ঘিরে ধরে তাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে, “বাড়ি কোথায় আপনার, এখানে কী করেন, একা ঘুরতে এসেছেন কেন? রাত কয়টা বাজে?” এর এক পর্যায়ে ওই নারীকে তারা পেটানোর ভয় দেখিয়ে চেয়ার থেকে উঠে যেতে বাধ্য করে।

ভিডিও ধারণ করা ব্যক্তি বলে ওঠেন “এখন পর্যন্ত কেলানি (মারধোর) দিয়ে আসছি ওখান থেকে। সম্মানের সাথে উঠে চলে যান, নাহলে কিন্তু অবস্থা কাহিল হয়ে যাবে। কেলানি খাবেন? দেন দেন শুরু করে দেন।”

তৃতীয় অপর ভিডিওতে দেখা গিয়েছে এক নারী কয়েকজন পুলিশ সদস্যের কাছে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে হাতজোড় করে তার মোবাইল ফোনটি চাইছেন। সেই নারীকেও বহু মানুষ ঘিরে ধরে ছিলেন। যার মধ্যে ফারুকুলকেও দেখা যায়। ওই নারী বার বার তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে কাকুতি মিনতি করে বলছিলেন, “আমার ফোনটা দিয়ে দেন। আমি আর কখনো আসবো না কক্সবাজারে। যদি দেখেন, আপনারা পানিশমেন্ট দিয়েন। আমি এখনই টিকেট করে চলে যাবো।”

অভিযুক্ত ফারুকুলের ফেসবুক পেইজ থেকে এসব ভিডিও এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট স্ট্যাটাস পোস্ট করতে দেখা যায়। তার প্রোফাইল দেখে ধারণা করা হয়, ভিডিওগুলো ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সি-গাল থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় ধারণ করা হয়েছে।

মূল হোতা ফারুকুল
সৈকতে নারী হেনস্তার মূল হোতা ফারুকুল ইসলামকে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা মাজেদুল ইসলামের ছেলে। মাদ্রাসার ছাত্র ফারুকুল কয়েক বছর ধরে তিনি কক্সবাজারের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাহারছড়া এলাকায় থাকেন।

গ্রেপ্তারের পর ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ ফারুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। ১৭ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক দিনের রিমান্ডে আনা হল তাকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
©ziacyberforce.com
themesba-lates1749691102