বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন
আপডেটঃ

শাপলা চত্বর ম্যাসাকার: ড্রাম্পিং গ্রাউন্ড মাতুয়াইল

Coder Boss
  • Update Time : সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪
  • ১১৮ Time View

 

গত ১৬ বছরের ফ্যাসিজম আর ডিক্টেটরশিপে পেঁচিয়ে থাকা আতংকের কারণে অনেকেই অনেক ইনফরমেশন প্রকাশ করতে পারেননি। এখন আস্তে আস্তে সেই ইনফরমেশনগুলো সামনে আসছে, মিলে যাচ্ছে অনেকগুলো অসমাপ্ত পাজল। তাই আমিও ভাবলাম একটা ঘটনা শেয়ার করি। এই ঘটনা আমি আমার কাছের অনেককেই পারসোনালি শেয়ার করেছি, কিন্তু পাবলিকলি এই প্রথম বললাম।

(বিশেষ দ্রষ্টব্য : মাতুয়াইল ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ঘটনাটা ওই এলাকায় বাস করেন এমন মানুষজনই আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। উনাদের থেকে যা শুনে এসেছি সেটাই এই পোস্টে লিখেছি। এর সাক্ষী হিসেবে আমার তখনকার কলিগকেও আমি এই পোস্টে ট্যাগ করেছি। ঘটনার সত্যতা কতটুকু সেটা অবশ্যই তদন্তকারী বিভাগ যাচাই করে দেখবেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি শাপলা চত্বরে সেদিন রাতে যা হয়েছিলো সেখানে সরকারী ক্যাজুয়ালটির হিসাব কোনদিনই গ্রহণযোগ্য নয় এবং প্রচুর তথ্য ও এভিডেন্স গোপন করা হয়েছে।)

২০১৬ সালে (মাসটা ঠিক মনে নাই, খুব সম্ভবত এপ্রিল কিংবা মে মাস হবে) ব্যক্তিগত একটা ডকুমেন্টারির কাজে সাইট রেকির জন্য আমি আর Mithun Banik গিয়েছিলাম ঢাকার যাত্রাবাড়ীর পেছনের দিকের এরিয়া, গোলাপবাগের ভেতরে। সেখান থেকে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে আমরা পৌঁছে যাই কাজলার পাড় এলাকায়। লোকাল কয়েকজন ভাইব্রাদার কে নিয়ে এরিয়া ঘুরে দেখছিলাম, উনারাও আমাদেরকে বিভিন্ন এলাকা ও স্থাপনা দেখাচ্ছিলেন।

এক পর্যায়ে আমরা এসে পৌঁছাই কাজলার পাড়ের শেষ প্রান্তে, যেখানে শহরের চিহ্ন শেষ হয়ে খোলা ধানি জমি শুরু হয়েছে। আমাদের ডান পাশে ঢাকা-ডেমরা হাইওয়ে, সাঁই সাঁই করে গাড়ি যাচ্ছে। সামনে কিছুটা দূরে, বড় বড় ফ্লাডলাইটের আলোয় আলোকিত বিশাল এক খোলা অঞ্চল। কিছু বুলডোজার আর এক্সক্যাভেটর কাজ করছে, আর এই রাতের বেলাও উড়ছে শত শত কাক। আশেপাশে পুরোটাই খালি জায়গা হওয়ায় কাকের চিৎকার আমাদের কান পর্যন্ত ভেসে আসছে।

আমি একটু কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই ওইটা কি?” আমাদের সঙ্গে থাকা একজন উত্তর দিলেন, “ওইটা? ওইটা মাতুয়াইল ডাম্পিং গ্রাউন্ড!”

আমি তখন বললাম, “বাপরে, এত বড় ময়লার ভাগাড়ে কাউকে গায়েব করে ফেললে তো কোনদিন খুঁজেও পাওয়া যাবে না!”
এরপরেই উনাদের মাঝে নেমে এলো এক অস্বস্তিকর নীরবতা। ওই ভদ্রলোক নিজে থেকেই জানালেন এক নির্মম সত্য যেটা গোলাপবাগ, কাজলার পাড়, বিবির বাগিচা সহ আশেপাশের সব এলাকার মানুষই জানে কিন্তু মুখ খুলতে কেউ রাজি না।

২০১৩ সালের ৫ই মে রাতে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অন্তত এক লাখ কর্মীকে চত্বর থেকে সরানোর জন্য রাত ১টা থেকে জয়েন্ট অপারেশন শুরু করে পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবি। এর দুইঘন্টা পর রাত ৩টা/সাড়ে ৩টার দিকে অনেকগুলো ট্রাক প্রবেশ করে মাতুয়াইল ডাম্পিং গ্রাউন্ডে।

সেই ট্রাকগুলো থেকে নামানো হয় সারি সারি পাঞ্জাবি পায়জামা পরা রক্তাক্ত লাশ। কারো মাথায় তখনো টুপি আছে, কারো মাথায় নাই। কারো বুকের মধ্যে গর্ত, কারো মাথায়। বোঝাই যাচ্ছে গুলি খাওয়া।

সেই লাশগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে। সেখানে ওয়েস্ট প্রসেসিং মেশিনে গার্বেজের সাথে একে একে ফেলে দেয়া হয় লাশগুলো। ক্রাশিং এবং শ্রেডিং করে হাড় মাংস সব মিশিয়ে দেয়া হয় ময়লার সাথে। এমনভাবে মিশিয়ে দেয়া হয় যে প্রফেশনাল ফরেনসিক টিম আর তাদের ইকুইপমেন্ট ছাড়া খালি চোখে সেই প্রসেসড গার্বেজ দেখলে কেউ বলতে পারবেনা এর মধ্যে মানুষের দেহাবশেষ আছে। পুরো ঘটনাটা তদারকি করে র‍্যাব এবং লোকাল সরকার দলীয় কিছু নেতা।

সেইদিন এক্স্যাক্টলি কয়টা লাশের ভাগ্যে এই পরিণতি হয়েছিলো সেটা কেউ বলতে পারবে না। তবে নাম্বারটা যে তিন সংখ্যার কম নয় এই ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত।

– Farhad Rakib

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©ziacyberforce.com
themesba-lates1749691102