মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ পূর্বাহ্ন

প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে থানায় থানায়

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪
  • ২৯ Time View

অন্তর্বর্তী সরকার ও নাগরিক চেষ্টায় প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে থানায় থানায়। ভয় কাটিয়ে থানায় আসতে শুরু করেছেন আত্মগোপনে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা। বেশির ভাগ থানাতেই সাধারণ জিডিসহ চালু করা হয়েছে নিয়মিত সকল কার্যক্রম। তিনদিন ধরে পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটনের তেজগাঁও, মোহম্মদপুর, শাহবাগ, নিউমার্কেট, গুলশান, রমনা, কলাবাগান, ধানমণ্ডি, হাজারীবাগ, কোতোয়ালি, চকবাজার, সূত্রাপুর, ডেমরা, গেণ্ডারিয়া, মতিঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর, শেরেবাংলা নগর, হাতিরঝিল, শাহ আলী, কাফরুল, ভাষানটেক, দারুসসালাম, রূপনগর, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, উত্তরা পশ্চিম, উত্তরখান ও বিমানবন্দর থানাসহ মোট ২৯টি থানার কার্যক্রম আবারো শুরু করে। এরপর শনিবার চালু হয় আরও ১৬টি থানা। বাকি পাঁচ থানার গেট খোলে গতকাল। পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোববার পর্যন্ত সারা দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৫৯৯টি থানার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার ১১০টি থানার মধ্যে ৯৭টি এবং বিভিন্ন জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫০২টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

 

সরজমিন ডিএমপি’র তেজগাঁও থানায় দেখা গেছে, থানাটির গেটের সামনে পাহারায় আছেন পাঁচজন সেনাবাহিনীর সদস্য। আর তাদের সঙ্গে আছেন আরও আটজন আনসার বাহিনীর সদস্য। আর থানার অদূরে টহলে আছেন আরও দুই প্লাটুন সেনাবাহিনীর সদস্য।

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে থানার কার্যক্রম শুরু করেন তেজগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় অনেকেই তাদের অভিযোগ নিয়ে থানায় আসছেন। সাধারণ ডায়েরিও করছেন। তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আমরা জনগণের সেবক। আপনারা থানায় আসুন। আপনাদের সেবার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তেজগাঁও থানার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, আমরা সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পুলিশের সকল কার্যক্রম শুরু করেছি। সব নাগরিকদের কাছে অনুরোধ আপনারা থানায় আসুন। আপনাদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। গতকাল সকাল ১১টায় রাজধানীর মোহম্মদপুর থানায় গিয়েও দেখা যায়, সেখানেও বেশ সংখ্যক সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় রয়েছেন। থানায় আসা পুলিশ সদস্যরা সেনা সদস্যদের কাছে খাতায় স্বাক্ষর করে হাজিরা দিচ্ছেন। চলছে থানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজও। তবে এখনো থানাটির জিডি বা অন্যান্য কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। থানায় আগত পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন সাদা পোশাকে। তারা বলেছেন, আসবাবপত্র, গাড়ির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ নথিও পুড়ে গেছে। বসে কাজ করার মতো অবস্থা ছিল না। ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক করা হচ্ছে। এতেই কিছুটা সময় লাগছে। পুলিশ সদস্যরা জানান, থানায় হামলা হওয়ার জন্য আমাদের পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের মধ্যে ভয় কাজ করছিল। তবে আগের চেয়ে কিছুটা হলেও ভয় কেটেছে। গত তিন-চারদিন ধরে তো কেউই থানায় আসেনি। এখন আবার পুলিশ সদস্যদের থানায় আসা শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি দুই একদিনের মধ্যেই আমরা আমাদের পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। শাহবাগ থানার এসআই মাইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের কার্যক্রম চালু রয়েছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। দুপুরে নিউমার্কেট থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানাটিতে আগের চেয়ে বেড়েছে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি। কার্যক্রমও চালু রয়েছে। তবে এখনো বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য থানায় আসছেন সাদা পোশাকে। নিউমার্কেট থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি। আপাতত মানুষের অভিযোগ জমা (জিডি) নেয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে কাজের গতি আরও বাড়বে। বাড্ডা থানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন সেনা সদস্যরা। আর যোগদানকৃত পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন থানার বাইরে। বাড্ডা থানার ওসি মো. আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের থানার ১৭০ জন সদস্যের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৪০ জন সদস্য জয়েন করেছেন। আজও কয়েকজন জয়েন করেছেন। শুধু গুরুতর আহত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি তারা আসতে পারেননি। তবে আমাকে অবহিত করেছেন। আশা করি আজ রাত অথবা আগামীকাল সকাল থেকে থানার কার্যক্রম আমরা শুরু করতে পারবো। কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর গুলশান থানায়ও চালু হয়েছে কার্যক্রম। গুলশান থানার সামনেও সেনা সদস্যদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তাদের সঙ্গেও রয়েছেন আনসার সদস্যরা। আর থানার ভিতর কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, গুলশান থানায় কোনো হামলা হয়নি। তবে ভীতিকর পরিবেশের জন্য অনান্য থানার মতো আমাদের থানার কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। শুক্রবার সকাল থেকে আবারো আমাদের থানায় স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ সদস্যরাও থানায় আসছে। আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে। রাজধানীর ভাটারা থানার সামনেও সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। কার্যক্রম শুরু না হলেও যোগ দিয়েছেন বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য। ভাটারা থানার ওসি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, গত শুক্রবার আমরা থানা খুলে দিয়েছি। কিন্তু বসার মতো পরিস্থিতি ছিল না। শিক্ষার্থীরা আমাদের থানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে সাহায্য করছেন। আমরা অন্যদেরকেও পুলিশকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের এখানে জোনভিত্তিক একজন এসি, এসি ট্রাফিক, একজন পেট্রোল ইন্সপেক্টর, তিনজন ইন্সপেক্টর, ৩৯ জন সাব-ইন্সপেক্টর, ২৩ জন এসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর, পুরুষ কনস্টেবল ৪০ জন, মহিলা কনস্টেবল ১২ জন, ১৫ জন ড্রাইভার কনস্টেবল, সাধারণ আনসার ৪৩ জন, বিশেষ আনসার দুইজন এবং একজন পরিচ্ছন্নকর্মী কর্মরত ছিলেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ইতিমধ্যে যোগদান করেছেন। কেউ কেউ আহতাবস্থায় যোগদান করেছেন। শুধু গুরুতর আহত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি তারা এখনো আসতে পারেননি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারবো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
©ziacyberforce.com
themesba-lates1749691102