বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংগঠন (আইএটিএ)। বাংলাদেশের কাছে আইএটিএভুক্ত বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। পাওনা পরিশোধের তাগিদ দিয়ে সংস্থাটি বলছে, আকাশপথে যোগাযোগ কমিয়ে সীমিত করার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রপ্তানিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ এনেছে আইএটিএ। দেশটির কাছে সংস্থাভুক্ত বিমান পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ৩৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার পাওনা। গত ২৪শে এপ্রিল এক বিবৃতিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে আইএটিএ।
বৈশ্বিক বিমান চলাচল শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএটিএ বিবৃতিতে অডিট ও আয়কর বাদ দেয়াসহ নানা জটিল প্রক্রিয়ার প্রেক্ষিতে একে সহজতর করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে প্রক্রিয়াটিতে অপ্রয়োজনীয় কোনো বিলম্ব না ঘটে। সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশের ব্যবস্থা অধিকতর মানসম্মত। যদিও বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রার সুবিধা সহজলভ্য করা প্রয়োজন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বাজারে বিমান সংস্থাগুলোর পাওনা আছে ৭২ কোটি ডলার। এই অর্থ না পাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। লিজ চুক্তি, খুচরা যন্ত্রাংশ, ওভারফ্লাইট ফি এবং জ্বালানির মতো ডলারনির্ভর খরচ মেটানোর জন্য বিভিন্ন দেশের কাছে এই পাওনা সময়মতো পরিশোধ করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জোর দিয়ে তুলে ধরেন এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে আইএটিএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলিপ গোহ।
তিনি আরও বলেন, এই পাওনা পরিশোধে বিলম্ব দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন এবং তাতে বিমান সংস্থার জন্য ঝুঁকির হার বৃদ্ধি করে।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে অবশ্যই কমপক্ষে ৭২ কোটি ডলার ছাড় দিতে হবে। তারা এই অর্থ আটকে রেখেছে। এটা পরিশোধ করতে হবে, যাতে বিমান কানেক্টিভিটি বজায় থাকে। ফিলিপ গোহ বলেন, তার সংগঠন এটা স্বীকার করে যে, এই দুটি সরকার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বৈদেশিক মুদ্রাকে কীভাবে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নির্ধারণ করা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, আকাশপথে কানেক্টিভিটি কমিয়ে সীমিত করার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রপ্তানিকে প্রভাবিত করবে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হাতে আটকে থাকা এত বিপুল পরিমাণ অর্থের জরুরি সমাধান হওয়া উচিত।
গত বছরও আইএটিএ এক বিবৃতির মাধ্যমে পাওনা অর্থ পরিশোধের তাগিদ দিয়েছিল। তখন সংস্থাটির তরফে জানানো হয়, উড়োজাহাজ শিল্পের আটকে থাকা অর্থের ৬৮ শতাংশ আটকে আছে পাঁচটি দেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ওই সময় শীর্ষে থাকা নাইজেরিয়ায় ৮১২.২ মিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশে ২১৪.১ মিলিয়ন ডলার, আলজেরিয়ায় ১৯৬.৩ মিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানে ১৮৮.২ মিলিয়ন ডলার এবং লেবাননে ১৪১.২ মিলিয়ন ডলার আটকে ছিল বলে আইএটিএ জানিয়েছিল।
আইএটিএ হলো বিশ্বের উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর ট্রেড এসোসিয়েশন। এটি প্রায় ৩০০ উড়োজাহাজ সংস্থা বা মোট এয়ার ট্র্যাফিকের ৮৩ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। উড়োজাহাজ চলাচলের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পনীতি প্রণয়নেও সহায়তা করে এই সংগঠনটি।