জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনের বিরুদ্ধে। এছাড়া আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা গেছে। এছাড়া অভিযুক্তকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে আরেক ছাত্রলীগ নেতা।
শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। অন্য অভিযুক্ত হলেন মামুন। তিনি আশুলিয়ার জিরানিতে থাকেন। এছাড়া ভুক্তভোগী নারীও আশুলিয়ার জিরানিতে বসবাস করেন।
শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে নিয়ে আসেন মামুন। তার স্বামী অভিযুক্ত মামুনকে জানান, তারা কিছু আসবাবপত্র কিনবেন। তখন মামুন তাকে বলেন, এক আসবাবপত্র দোকানে তার টাকা পাওনা আছে, কিন্তু দোকানদার টাকা ফেরত দিচ্ছেন না।
ওই দোকান থেকে আসবাবপত্র কিনে টাকাটা যাতে মামুনকে দেওয়া হয়। তাকে নিয়ে দোকানে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর স্বামীর।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘মামুন আমাদের বাসায় ভাড়া থাকত। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে কল দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজের কাছে থাকবে বলেও জানান।’
এরপর মোস্তাফিজ ও মামুন মিলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে মীর মশাররফ হোসেন হলে আটকে রাখেন। পরে জামা-কাপড় নিয়ে ওই নারী ক্যাম্পাসে আসলে তার কাছ থেকে সেগুলো নিয়ে কক্ষে রেখে আসতে যান মামুন।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘পরে আমার স্বামী অন্যদিকে থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে মোস্তাফিজও ছিল। তখন তারা আমাকে ধর্ষণ করে।’
জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে মোস্তাফিজুর রহমান থাকতেন। এ বিষয়ে হলের একাধিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতারা জানান, মোস্তাফিজুরের সঙ্গে মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবার ব্যবসা করতেন। মামুন প্রায়ই হলে যাতায়াত করতেন।
এ ঘটনা জানাজানির পর শিক্ষার্থীরা মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ দিকে হল থেকে পালিয়ে যেতে মোস্তাফিজুরকে সহযোগিতা করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির, যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। তারা মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলে এসেছি। এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে, আমরা সহযোগিতা করব। হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক, আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করব।’
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাসিক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।