রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১১ পূর্বাহ্ন

ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্ট বাংলাদেশে ‘অন্যায্য’ নির্বাচনের প্রস্তুতি

Coder Boss
  • Update Time : সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩
  • ২৬৮ Time View

যদিও বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ই জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে, অধিকারকর্মী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- নির্বাচনের জন্য মোটেও উপযোগী নয় দেশের পরিস্থিতি। বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে অব্যাহত আছে গণহারে দমনপীড়ন। দেশজুড়ে দলীয় নেতা এবং কর্মীদেরকে খেয়ালখুশিমতো এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, এ অবস্থায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছেন, জানুয়ারিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদেরকে দিয়ে বাংলাদেশের জেলখানা দ্রুতই ভরে ফেলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মাসেই রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গণহারে খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তারের মামলাগুলো প্রামাণ্য আকারে উপস্থাপন করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ব্লেকনার আরও বলেন, বিরোধী দলের সদস্য, সমালোচক এবং মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের চলমান পর্যায়ক্রমিক দমনপীড়নের ফলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। অনলাইন ভয়েস অব আমেরিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ আছে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। গত বছর থেকে এবারের জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশগুলো।

সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয় যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে তারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর বিএনপি এবং তার মিত্ররা অব্যাহতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করছে। সরকারের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরোধী দলের বিরুদ্ধে চালানো দমনপীড়নে প্রতিদিনই বিরোধী দলের কয়েক শত নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
রাজবন্দিতে জেল পূর্ণ: দেশে ৬৮টি জেলখানা আছে। তার ধারণক্ষমতা ৪২,৭০০। বর্তমানে তা বন্দিতে উপচে পড়ছে। সেপ্টেম্বরে বন্দির সংখ্যা ৭৭,২০০ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। দলীয় বিবৃতি অনুযায়ী, এসব বন্দির মধ্যে বিএনপি এবং তার মিত্রদের কমপক্ষে ২৫,০০০ রাজবন্দি। ভয়েস অব আমেরিকাকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন থেকে দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দলকে দূরে রাখতে চায় সরকার। তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মীসহ আমাদের প্রায় সব সিনিয়র নেতাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে সরকার। তারা এটা করেছে যাতে আমাদের দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করতে না পারে। গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী আত্মগোপনে আছেন। তারা বাড়ির বাইরে অবস্থান নিয়েছেন। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ এই মুহূর্তে নেই। এই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ অর্থহীন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেছেন, বিরোধীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি অথবা অন্য বিরোধী দলগুলো কোনো সহিংস ঘটনায় যেমন ককটেল হামলা, পুলিশের বিরুদ্ধে হামলা ইত্যাদি অভিযোগে জড়িত থাকার রিপোর্ট পাই আমরা, তখন পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করে। এই তদন্তে যদি কাউকে দোষী পাওয়া যায় তাহলেই তাকে গ্রেপ্তার বা মামলা করা হয়।
বিএনপি এক বিবৃতিতে বলেছে, কয়েক দিনে কমপক্ষে ৪০০ সাবেক এমপি, সিনিয়র নেতা ও কর্মীকে জেল দিয়েছে আদালত। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীও আছেন। ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্টের মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান। তার এই প্রতিষ্ঠান কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রামাণ্য আকারে তুলে ধরছে। মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের শায়েস্তা করতে পর্যায়ক্রমিকভাবে দেশের বিচারবিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, একতরফা জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে গণহারে অভিযুক্ত করতে শাসকগোষ্ঠীর বাসনা পূরণ করছে বিচারবিভাগ। বাংলাদেশের জনগণ দৃশ্যত এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে এমন একটি লজ্জার নির্বাচন করতে একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে বিচারবিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো, গোয়েন্দা ইউনিটগুলো এবং নির্বাচন কমিশন।

একটি প্রকৃত নির্বাচন নয়: ঢাকা ভিত্তিক গণতন্ত্রপন্থি গ্রুপ ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ বা সুজনের প্রতিষ্ঠাতা বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আরেকটি একপক্ষীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, সংজ্ঞা অনুযায়ী নির্বাচনে বিকল্প প্রার্থীদের, যারা হবেন তুলনীয়, তাদের মধ্য থেকে ভোটাররা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে বেছে নেবেন। ভোটার স্বাধীনভাবে প্রার্থীকে বাছাই করবেন। আমাদের বাংলাদেশের নির্বাচনে দুটি বড় তুলনীয় ব্রান্ড আছে। তারা হলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ভগ্নাংশ বা কিংস পার্টিগুলোর অংশগ্রহণ সত্ত্বেও এই দুটি দলের মধ্যে একটির অনুপস্থিতিতে একতরফা নির্বাচনে মূল্যবান প্রার্থীকে বেছে নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন ভোটাররা। এমন চর্চায়, কে বিজয়ী হবেন তা প্রায় পূর্বনির্ধারিত। একে একটি খাঁটি নির্বাচন বলা যায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, প্রধান বিরোধী দলগুলোকে বাদ রেখে এবং আগের কারসাজি করা দুটি নির্বাচনের মতো নির্বাচন হলে তার পরিণতি হবে গুরুতর। তা শুধু রাজনৈতিক হবে এমন না। একই সঙ্গে এই পরিণতি হবে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক। প্রফেসর আলী রীয়াজ ভয়েস অব আমেরিকাকে আরও বলেন, দেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের নির্বাচন হতে যাচ্ছে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। এই নির্বাচন এটাই নির্ধারণ করবে যে দেশ কোনপথে যাবে- কম্বোডিয়ার মতো একদলীয় একটি রাষ্ট্র হবে নাকি গণতন্ত্রের পথে ফিরবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতা ও কর্মীদেরকে নির্বাচনের আগে গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক গতিতে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে অপ্রমাণিত মামলায়। এটা পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে কারসাজি করতে চায়। নির্বাচন কমিশনের একতরফা নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা দেয়ায় এ উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন নিয়ে যে কারসাজির ছক একেছে, নির্বাচন কমিশন তা বাস্তবায়নের একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। যেকোনো অর্থে একটি অর্থপূর্ণ নির্বাচন একেবারেই অসম্ভব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©ziacyberforce.com
themesba-lates1749691102