চল্লিশ শতাংশ শুল্ক আরোপের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো প্রতি টন পিয়াজের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়েছে ভারত সরকার। ১৫০ ডলার থেকে রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে ৩৫০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এতেই বাংলাদেশের পিয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বাজারভেদে ১ কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা। আর আমদানিকৃত ভারতীয় (বড়) পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
গতকাল সরজমিন রাজধানীর কাওরান বাজারের পিয়াজের আড়ৎ গুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি দেশি পিয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকায়। আমদানিকৃত পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। মো. সোহেল নামে এক আড়ৎদার বলেন, দেশি-এলসি সব পিয়াজের দামই আগের চেয়ে বাড়তি। তিনি বলেন, দেশে যে পিয়াজ উৎপাদন হয়, তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। বিপুল পরিমাণ পিয়াজ বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যার বেশির ভাগই আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে।
তাই ভারতে শুল্ক না কমালে আর দেশের বাহির থেকে পর্যাপ্ত পিয়াজ আমদানি না হলে দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এদিকে একই বাজারের খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আর আমদানিকৃত পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৪/৭৫ টাকা। কাওরান বাজারের অদূরে রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ১ কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। আমদানিকৃত পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারটিতে কেনাকাটা করতে আসা মো. রিয়াজ নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, প্রতিদিনই বাজারে জিনিসপত্রের দাম ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১০ টাকা কমায়। বাজার একদম নিয়ন্ত্রণহীন। গত সপ্তাহে যে দামে কিনেছি আজকে বাজারে এসে পিয়াজের আবার নতুন দাম শুনছি। তাই ২ কেজির বদলে আধা কেজি পিয়াজ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।
রাজধানীর পলাশী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও কেজিপ্রতি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। আমদানিকৃত পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। ধানমণ্ডির সবচেয়ে বড় রায়ের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আর আমদানিকৃত ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এ এলাকার পাইকারি বাজার সাদেক খানের মার্কেট। সেখানে মেসার্স পাবনা ভাণ্ডার, মেসার্স রাজবাড়ী ট্রেডার্স, মেসার্স মালেক এন্টারপ্রাইজসহ বেশকিছু আড়তে বস্তাপ্রতি দেশি পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।
আমদানিকৃত পিয়াজ প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। মেসার্স পাবনা ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে কয়েক প্রকারের পিয়াজ রয়েছে। একেক ধরনের পিয়াজ একেক দামের। তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরেই পিয়াজের বাজার বাড়তি। ভারতীয় পিয়াজের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। যার প্রভাব ধীরে হলেও আমাদের বাজারে পড়তে শুরু করেছে। সামনের দিনে এই প্রভাব আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, আড়তে পিয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে না বাড়লেও পাড়া-মহল্লা ও খুচরা পর্যায়ে অনেকই চড়া দামে পিয়াজ বিক্রি করে মুনাফা লুটছেন।
অপরদিকে রাজধানীর গুলশান, বনানী, মিরপুর, বনশ্রী, মোহম্মদপুর, ফার্মগেট, কলাবাগান, খিলগাঁও, নিকুঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, আগের চেয়ে কয়েক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে দেশি-বিদেশি পিয়াজের দাম।
অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) সীমান্তে আগের চেয়ে বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে পিয়াজের দাম। ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। বাজার শূন্য দেশি পিয়াজ। তবে শুল্ক বাড়ানোর পরও প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি ট্রাকে করে ১ হাজার থেকে ১২০০ টন পিয়াজ ঢুকছে দেশে।
যশোরের বেনাপোল বর্ডারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে গত ২৬শে আগস্ট সর্বশেষ ৩ হাজার ২৯৮ টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে দেশে। এর পর থেকে নতুন করে আর আমদানি হয়নি বেনাপোল-পেট্রাপল সীমান্ত দিয়ে। কবে নাগাদ এই অস্থিরতা কাটবে তাও বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার খাতুনগঞ্জ বাজারেও আগের চেয়ে বাড়ছে পিয়াজের ঝাঁজ। চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জানান, আড়তদারদের কাছে পিয়াজ মজুত থাকায় আগের দামেই অর্থাৎ প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৬০ টাকা ও আমদানিকৃত পিয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। তবে ভারতে দাম বাড়ানোর কথা আমরা জানতে পেরেছি। যার প্রভাব সামনের সপ্তাহ থেকে বাজারে পড়তে পারে। কিন্তু আমরা দাম না বাড়ালেও ভারতের শুল্ক বাড়ানোর খবরে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আগের চেয়ে বেশি দামে পিয়াজ বিক্রি করছেন।