বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বৃটেনভিত্তিক ওই মানবাধিকার সংস্থার সোমবারের বিবৃতিতে বলা হয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জোরালোভাবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। অতি প্রয়োজন হলেই কেবল নূন্যতম শক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে কোনো অবস্থাতেই বিক্ষোভ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে আগ্নেয়াস্ত্র ও রাবার বুলেট ব্যবহার করা যাবে না। গুটিকয়েক মানুষের সহিংস আচরণে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না, যাতে পুরো বিক্ষোভ ‘সহিংস’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
যে কোনো ধরনের সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়ে অ্যামনেস্টি বলেছে, নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনের পরে মানবাধিকার পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। বিক্ষোভকারীদের দমন না করে কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের কথা বলার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার বাস্তবায়নে সহায়তার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করা। অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অন্তর্বতীকালীন আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিংহ বলেন, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী মাসগুলোতে আরও সহিংতা ও অস্থিরতার আশঙ্কা রয়েছে। এই সময়ে নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘনের হুমকিও বাড়ছে। সে কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে উত্তেজনা কমানো।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে শুধু সেই সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবহার করতে হবে, যারা মানবাধিকার রক্ষা করে সভা-সমাবেশ ঘিরে পুলিশি সেবা দিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
এসব সংস্থাকে প্রয়োজন ছাড়া বল প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। কোন পরিস্থিতিতে তারা বল প্রয়োগে বাধ্য হচ্ছেন তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা অর্থাৎ জবাবদিহিতা থাকতে হবে। শনিবার ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে ঢাকার মাতুয়াইল, উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গায় দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। মাতুয়াইলে সংঘর্ষের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আহত হন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অবিলম্বে বিরোধীদলীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও রহিম নেওয়াজের ওপর হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানায়। এছাড়া বিক্ষোভকারী ও বিরোধী নেতাদের যেন নির্বতনমূলক গ্রেপ্তার করা না হয়, তা নিশ্চিত করতেও কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায় মানবাধিকার সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যে, খেয়ালখুশিমতো বিক্ষোভকারী ও বিরোধী দলীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যখনই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে অংশ নিয়েছেন এমন যৌক্তিক তথ্যপ্রমাণ থাকে শুধুমাত্র তখনই গ্রেপ্তার করা যাবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৮ ও ২৯ শে জুলাই বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল ও অন্য গ্রুপগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগের দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। এসব বিক্ষোভ পুলিশের সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। বেশ কিছু মিডিয়া রিপোর্ট এবং প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে প্রতিবাদকারী এবং বিরোধী দলীয় নেতাদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, কয়েক দিন ধরে বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সহিংস ঘটনার ধারাবাহিক কিছু ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ওই হামলা সর্বশেষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সপ্তাহান্তে সহিংসতায় প্রায় ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বিরোধী দলগুলো এবং অধিকারকর্মীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে আসছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। এরই মধ্যে দু’জন নিহত হয়েছেন। তখন থেকেই কয়েক শত বিক্ষোভকারী এবং পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।