আমাদের গ্রহের উষ্ণায়ন সংক্রান্ত একটি নতুন গবেষণা বলছে, এবার সতর্ক হবার সময় এসেছে। কারণ বিজ্ঞানীরা যা ভেবেছিলেন তার চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র পতনের দিকে যাচ্ছে।
গবেষণা অনুসারে, বিশ্বের সম্ভাব্য বিপর্যয়মূলক ঘটনাগুলি-যেমন আর্কটিক পারমাফ্রস্ট গলে যাওয়া, গ্রিনল্যান্ডের বরফের পাত ভেঙে যাওয়া এবং আমাজন রেইনফরেস্টের সাভানায় হঠাৎ রূপান্তর জানান দিচ্ছে- ২০৩৮ সালের মধ্যে বড় বিপর্যয় আসতে চলেছে ।
জলবায়ুবিদ্যায়, একটি “টিপিং পয়েন্ট” হলো সেই থ্রেশহোল্ড যার জেরে কোনো এলাকার স্থানীয় জলবায়ু অপরিবর্তনীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি গ্রিনল্যান্ডের বরফের শীটটি ভেঙে পড়ে, তবে এটি দ্বীপের উত্তর অংশে তুষারপাতকেও কমিয়ে দেবে ।
২২ শে জুন নেচার জার্নালে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি জলবায়ুর বিপর্যয়কর প্রভাব ঘটতে পারে। যুক্তরাজ্যের ব্যাঙ্গর ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাইমন উইলকক একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্রের এক পঞ্চমাংশেরও বেশি ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। চলমান ঘটনাগুলি দ্রুত পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। একবার এগুলি একটি টিপিং পয়েন্টে পৌঁছালে, অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং অন্যান্য পরিবেশগত চাপ কীভাবে জটিল বাস্তুতন্ত্রকে ভেঙে ফেলতে পারে তা বোঝার জন্য, বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার মডেলগুলি ব্যবহার করেন। তারপরেই তারা বাস্তুতন্ত্রের ভাগ্যের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল (জলবায়ু বিজ্ঞানের মূল্যায়নের জন্য জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা) তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে, আমাজন রেইনফরেস্ট একটি টিপিং পয়েন্টে পৌঁছাতে পারে যার ফলে ২১০০ সালের মধ্যে এটি সাভানাতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে ।
গবেষকদের মতে, বেশিরভাগ টিপিং-পয়েন্ট বাস্তুতন্ত্রের পতনের দিকে ফোকাস করে। উদাহরণস্বরূপ আমাজন রেইনফরেস্ট বিপর্যয়।
ইকোসিস্টেমগুলি শুধুমাত্র একটি সমস্যার সাথে লড়াই করছে না বরং অস্থিতিশীল কারণগুলিও এর পতনকে ত্বরান্তিত করছে – উদাহরণস্বরূপ, আমাজনের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, মাটির ক্ষয়, পানি দূষণ।
বিজ্ঞাপন
Ad
এই উপাদানগুলি কীভাবে একটি সিস্টেমের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করতে পারে তা তদন্ত করার জন্য, নতুন গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত বিজ্ঞানীরা দুটি হ্রদ এবং দুটি বনের বাস্তুতন্ত্রের কম্পিউটার মডেল তৈরি করেছেন।
অনুসন্ধানের পর তারা জানাচ্ছেন, বাস্তুতন্ত্রের আকস্মিক রূপান্তর বর্তমানে ৮০% কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এমনকি যখন বিপর্যয়ের মূল কারণটিকে সময়ের সাথে বাড়তে দেওয়া না হলেও ১৫% বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল নতুন উপাদানগুলির কারণে।
যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটির ভৌত ভূগোলের অধ্যাপক সহ-লেখক জন ডিয়ারিং একটি ই-মেইলে লাইভ সায়েন্সকে বলেছেন, ”চারটি পরিবেশগত মডেল থেকে আমাদের প্রধান অনুসন্ধান ছিল যে, বাস্তুতন্ত্রগুলি অতিরিক্ত চাপের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ৩০-৮০% আগে ভেঙে পড়তে পারে।
টিপিং পয়েন্টগুলি দেখে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি যে, চাপের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে জলবায়ুর বিপর্যয় ২৩ থেকে ৬২ বছর আগে ঘটতে পারে।”
এর মানে হলো, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে উল্লেখযোগ্য সামাজিক এবং অর্থনৈতিক খরচ প্রত্যাশিত সময়ের তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি আসতে পারে, সরকারগুলি প্রতিক্রিয়া জানাতে আরও কম সময় হাতে পাবে ।
যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিষষয়ক গবেষক গ্রেগরি কুপার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটি ভবিষ্যতের পরিবেশগত ঝুঁকি সম্পর্কে আমাদের ধারণার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। আর তাই বাস্তুতন্ত্রের উপর যে কোনও ক্রমবর্ধমান চাপ অত্যন্ত ক্ষতিকারক হবে, সেই সঙ্গে তার পরিণতিও হবে বিপজ্জনক।”
সূত্র : লাইভ সায়েন্স