বান্দরবানের রুমায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা বোমা (আইইডি) বিস্ফোরণে সেনাবাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছেন।গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছর কেএনএফ সন্ত্রাসীদের হামলায় চার সেনাসদস্য নিহত হলেন।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রুমা উপজেলার ছিলোপিপাড়া এলাকায় আজ সেনাবাহিনীর একটি টহল দল কেএনএফ সন্ত্রাসীদের সদর দপ্তরসহ একটি গোপন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প দখল করে। কেএনএফের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এলাকার আশপাশে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা সেনা জোনের একটি টহল দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই ক্যাম্পের উদ্দেশে যাত্রা করে। কেএনএফের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছালে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি পালিয়ে যায়। তবে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সেনা টহল দলটি সন্ত্রাসীদের বিক্ষিপ্তভাবে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণের মুখে পড়ে। বিস্ফোরণে আহত এক সেনাসদস্যকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হেলিকপ্টারে দ্রুত চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈনিক তুজাম (৩০) মৃত্যুবরণ করেন।
এর আগে গত ১৬ মে রুমাতেই আইইডি বিস্ফোরণ ও অতর্কিত গুলিতে সেনাবাহিনীর দুজন সৈনিক নিহত ও দুই অফিসার আহত হন। তারও আগে চলতি বছরের মার্চে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর কেএনএর অতর্কিত গুলিবর্ষণে সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন নিহত হন। আহত হন আরও দুই সেনাসদস্য।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত দলের এ ধরনের আরও সম্ভাব্য আইইডি সনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়করণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। দেশমাতৃকার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদ সেনাসদস্যের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার পাহাড়ি জনপদে ক্রমাগত হত্যা, অপহরণ, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করে চলেছে। তাদের এহেন মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে অভিযান পরিচালনা করছে। কেএনএফের কথিত সামরিক শাখার নাম কেএনএ। ইতিপূর্বে এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দেশের নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই আস্তানায় সমতল থেকে আসা জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিত বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এর আগে জানানো হয়েছে।
কেএনএফ নামের সংগঠনটি গড়ে ওঠে বান্দরবানের রুমা উপজেলায়। এর প্রধান রুমা উপজেলা সদর বাজারের বাসিন্দা নাথান বম। তিনি ২০১২ সালে কুকি চিন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনস (কেএনডিও) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। সেটি পরবর্তী সময়ে কেএনএফ নামের সশস্ত্র সংগঠনে রূপান্তর করেন।