লোডশেডিংয়ের কবলে ঢাকাসহ পুরো দেশ। বিদ্যুৎ এই আছে তো এই নেই। রাজধানী ঢাকার মতো জায়গায় লোডশেডিং হচ্ছে দিনে পাঁচ থেকে সাতবার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ব্যাহত হচ্ছে দিনের স্বাভাবিক কার্যক্রম। এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে লিফট বন্ধ হয়ে আটকা পড়ার ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন ভবনে। বন্ধ লিফটে আটকা পড়ে অনেকে আতঙ্কিত সময় কাটাচ্ছেন। বার বার এমন ঘটনা ঘটায় কেউ কেউ ভয়ে লিফট ব্যবহার করছেন না। আবার ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কোনো কোনো ভবনে লিফটই বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে সিঁড়ি মাড়িয়ে বাসিন্দারা উঠানামা করছেন।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এল ডোরাডো ডেভেলপমেন্টস এর ৫৯ নম্বর আবাসিক ভবন। দশতলা ভবনটির লিফট গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়েছে বলে জানান ভবনের নিরাপত্তারক্ষী মো. কালু। তিনি গতকাল বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ বার বার যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে লিফটও বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। এই ভবনের লিফট গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়েছে। দু’দিন আগে একটি শিশু লিফটের মধ্যে আটকা পড়েছিল। আমরা চাবি দিয়ে খুলে তাকে বের করি। শিশুটি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে আজ এখন পর্যন্ত একবারও বিদ্যুৎ যায়নি। তাই লিফটও বন্ধ হয়নি। তবে ভয়ে অনেকে লিফট ব্যবহার করছেন না।
একই অবস্থা পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ২৭২/ক/১ নম্বর ভবনটির। এই ভবনে গত কয়েকদিন ধরে কয়েকজন মানুষ আটকা পড়েছে বলে জানান ভবনটির নিরাপত্তারক্ষী মো. বারেক। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বার বার চলে যাওয়াতে লিফটে সমস্যা হচ্ছে। গত তিন-চার দিন থেকে অনেক বার লিফট বন্ধ হয়ে মানুষ আটকে গেছে। তাদেরকে আমরা চাবি দিয়ে খুলে বের করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ভবনে বাস করা একজন বাসিন্দা বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যাটি অনেক আগের। তবে গত কয়েকদিন ধরে এর মাত্রা তীব্র হয়েছে। দিনে পাঁচ-সাতবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। তাও আবার ঢাকা শহরের মতো এলাকায়। গত কয়েকদিন অনেক গরম ছিল। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে। ঘুমানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যা হলে মাঝে মাঝেই এই ভবনের লিফট বন্ধ হয়ে মানুষ আটকে যায়। এজন্য ভয়ে কেউ কেউ লিফটে উঠেন না।
একই এলাকার আরেকটি ভবনের কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন পাঁচবারের বেশি বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে লিফট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষও কখনো কখনো আটকা পড়ছে। তবে আমরা দ্রুত মানুষকে বের করে আনছি। দুই-তিনতলায় বাস করা অনেকে এই সমস্যার কারণে লিফ্ট ব্যবহার করে না। আজ দুপুর পর্যন্ত একবারও বিদ্যুৎ যায়নি। এই ভবনের বাস করা মো. খলিলুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র লোডশেডিং হচ্ছে। আর লোডশেডিং হলে লিফট বন্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই ভবনেও বেশ কয়েকবার লিফট বন্ধ হয়েছে।
এমন অবস্থা আগারগাঁওয়ের আরও কয়েকটি ভবনে। মূলত যেসব ভবনে পুরনো মডেলের লিফট ব্যবহার করা হয়েছে সেসব ভবনে বসবাসরত মানুষদের এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে নতুন মডেলের লিফটগুলো অটো সিস্টেম হওয়ায় এসব ভবনের মানুষদের আটকে যাওয়ার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।
রাজধানীর কাওরান বাজারে অবস্থিত ১১ তলা একটি ভবনে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অফিস। এখানে কয়েকশ’ কর্মী কাজ করেন। ওই ভবনের দুটি লিফটে তারা উঠানামা করেন। ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে ওই ভবনের লিফট প্রায়ই আটকে যায়। লিফট আটকে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। নিরাপত্তাকর্মীরা জানার পর ছুটে এসে আটকা পড়াদের উদ্ধার করেন। ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়। ভয়ে ২/১ জন লিফট ব্যবহার করছেন না। লিফট নিয়ে বেশি সমস্যায় আছেন সার্বক্ষণিক জেনারেটর নেই এমন ভবনের বাসিন্দারা। তেজতুরি বাজারের এমন একটি ভবনের নিরাপত্তারক্ষী জানান, ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় সার্বক্ষণিক জেনারেটর চালু রাখা যাচ্ছে না। এতে লিফট পরিচালনায়ও সমস্যা হচ্ছে।