বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ক্ষোভে গাইবান্ধার পলাশবাড়ির চার বছরের শিশু বায়েজিদকে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রেমিক সাকিব হাসান ওরফে রোমান (১৯)। বায়েজিদের গলিত মরদেহ উদ্ধারের তিন দিন পর এসব তথ্য জানান গাইবান্ধার পুলিশ সুপার কামাল হোসেন।
মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করে অভিযুক্তের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে এই তথ্য জানান তিনি।
এ সময় কামাল হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রোমান দাবি করেন নিহত শিশু বায়েজিদের বোন তিশা আক্তারের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে ঢাকা থেকে ফিরে আসার পর তিশা প্রেমিক রোমানের থেকে দূরে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে তিশার পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রোমান এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায়। বর্তমানে আমরা তদন্তের মাঝমাঝি পর্যায়ে রয়েছি। অধিকতর তদন্ত শেষে আশা করি বিস্তারিত জানানো যাবে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, পলাশবাড়ি উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা বালুখোলা গ্রামের প্রবাসী তাহারুলের স্ত্রী রায়হানা বেগম গত ৮ মে পলাশবাড়ি থানায় তার ৪ বছরের ছেলে শিশু বায়েজিদের নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে ১০ মে একই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে অপহরণ মামলা করেন তিনি। একই দিন ঘটনায় সন্দেহভাজন একই এলাকার সাইফুল ইসলাম ওরফে সিরিকুলের ছেলে সাকিব হাসান ওরফে রোমান (১৯) ও সোহরাব হোসেনের ছেলে শরিফুল ইসলামকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। সন্দেহভাজন আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, একই এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে খোরশেদ আলম (২১), রাজা মিয়ার ছেলে আসাদুজ্জামান ওরফে রনি (১৯), মজিবর রহমানের স্ত্রী ছকিনা বেগম (৬০), সাইফুল ইসলাম ওরফে সিরিকুলে মন্ডলের স্ত্রী ববিতা বেগম (৪৫), মোকছেদুর রহমানের স্ত্রী মনিরা বেগম (২২), সাইফুল ইসলামের ছেলে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু রোস্তম আলী মন্ডল (১৪) ও শরিফুল ইসলাম মন্ডলের ছেলে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু সোহাগ মন্ডল (১৬)। তাদের মধ্যে দুজন শিশুসহ চারজনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। বাকি পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।
এরমধ্যে রোমান ও শরিফুলকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক তথ্য না পাওয়ায় ওই দিনেই (১০ মে) রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে ১৩ মে শুনানি শেষে দুই আসামির দুদিন করে রিমান্ড আবেদন করেন আদালত।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৮ মে বিকেলে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা বালুখোলা গ্রামের বাড়ির উঠান খেলার সময় নিখোঁজ হয় শিশু বায়েজিদ। পরে তাকে আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার আশেপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পাওয়ায় ওইদিনেই বিষয়টি হরিনাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রকে অবহিত করলে রাতেই তারা বাড়ির আশেপাশের সম্ভাব্য এলাকাগুলো খুঁজে দেখে ব্যর্থ হয়। পরে এ ঘটনায় মনোহরপুরসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে মাইকিং করে শিশুটির পরিবার। তাতেও সন্ধান মেলায় পরদিন ৯ মে মঙ্গলবার সকালে পলাশবাড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে বায়েজিদের মা রায়হানা বেগম। জেলা জুড়েই মাইকিং চলে টানা দুইদিন। এতেও সন্ধান না মেলায় পরে ১০ মে শিশু বায়েজিদের মা রায়হানা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করে পলাশবাড়ি থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পরে নিখোঁজের ৫ দিন পর শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে স্থানীয়দের খবরে একই এলাকার একটি ধানখেত থেকে শিশু বায়েজিদের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।